নিজস্ব প্রতিবেদক :: দুর্বলতা বা একধরনের ভালোলাগা থেকেই এই পেশায় এসেছেন তিনি। এরপর দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে একটু একটু করে দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বলছি দেশীয় ফ্যাশন হাউস অঞ্জনসের কর্ণধার শাহীন আহমেদের কথা। অনেকটা চড়াই-উৎরাই পার করে দেশীয় সংস্কৃতিকে, দেশীয় পোশাকশিল্পকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার অনেকের মধ্যে তিনিও একজন দাবিদার।
ফিরে দেখা
ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে পথচলার শুরু কীভাবে জানতে চাইলে শাহীন আহমেদ এনটিভি অনলাইকে বলেন, আমাদের পারিবারিকভাবেই টেক্সটাইলের ব্যবসা ছিল। ছোটবেলা থেকেই বাহারি কাপড়, নিত্যনতুন ডিজাইন দেখে এসেছি। তাই একধরনের ভালোলাগা কাজ করত কাপড়ের প্রতি। সালটা ১৯৯৪। নরসিংদীর আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সে আমাদের একটি দোকান ভাড়া দেওয়ার কথা ছিল। আমাকে লোক দেখতে বলা হয়েছিল। তখন রোজার মাস। আমি অন্য লোককে ভাড়া না দিয়ে নিজেই সেই দোকানে পুরো রোজার এক মাস একটি পোশাক প্রদর্শনীর আয়োজন করি। যেখানে বেশির ভাগই পাঞ্জাবি আর অল্প পরিমাণে সালোয়ার-কামিজ ছিল। তখন বেশ সাড়া পেয়েছিলাম। এরপর আর আমি দোকানটি অন্য কারো কাছে ভাড়া দেইনি। ওইখানেই চার বছর কাজ করি। এরপর ১৯৯৮ সালে সোবহানবাগে দ্বিতীয় শোরুম নিই। মূলত তখন থেকেই বাণিজ্যিকভাবে অঞ্জনসের যাত্রা শুরু হয়।
অনুপ্রেরণায়
প্রতিটি কাজের পেছনে কারো না কারো অনুপ্রেরণা থাকে। আপনার এই সৃষ্টিশীল কাজের পেছনে কার অনুপ্রেরণা ছিল এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহীন আহমেদ বলেন, আমাদের যেহেতু টেক্সটাইলের ব্যবসা ছিল, সেই সুবাদে অনেক আগে থেকেই চন্দ্রশেখর সাহা, নিলুফার ইয়াসমিনকে দেখতাম বাবার সঙ্গে কাজ করতে। তাঁদের দেখে আমারও খুব ইচ্ছা করত পোশাক নিয়ে কাজ করার। বলতে গেলে তাঁরাই আমার কাজের অনুপ্রেরণায় ছিলেন। এ ছাড়া তখনকার সময়ে আড়ং, নিপুণ ফ্যাশন হাউসগুলো ছিল। সেই হাউসগুলোর কাজ দেখেই ফ্যাশন হাউস হিসেবে অঞ্জনস শুরু করার কথা ভাবি।
অঞ্জনসের বেড়ে ওঠা
কতটা বাধাবিপত্তি পার হতে হয়েছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে অঞ্জনসকে প্রতিষ্ঠা করতে এমন প্রশ্নের প্রতি-উত্তরে শাহীন আহমেদ বলেন, প্রায় ২০ বছর হয়ে গেল এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছি। একজন স্টাফ নিয়ে কাজ শুরু করি। বর্তমানে ২৫০ জন স্টাফ ও ২০০ শ্রমিক অঞ্জনসে কাজ করে। এ ছাড়া এর বাইরে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক আছেন, যাঁরা অঞ্জনসের সঙ্গে যুক্ত। আমরা শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি নিজস্ব ডিজাইন নিয়ে কাজ করার। এখন অবধি আমরা সেই চেষ্টাকে অব্যাহত রেখেছি। সে সময় আমাদের বাজার পুরোটাই বিদেশিনির্ভর ছিল। সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করেছি। মূলত দেশীয় পোশাকের বাজার তৈরি করতে চেয়েছি। পুরোটাই বদলে ফেলেছি বলব না। তবে অনেকটা বদলাতে পেরেছি। নয়তো আমাদের ঐতিহ্য হ্যান্ডলোম অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে যেত। নিজস্ব কাঁচামাল দিয়ে পোশাকের মান ও ডিজাইনে দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছি। আমাদের মতো অনেকেই আছেন, যাঁরা খুবই স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করেছেন। অনেক ধৈর্য আর চেষ্টার কারণেই আমাদের এই ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হয়েছে। যেখানে অঞ্জনসও অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আজ একটি সম্মানজনক স্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
বিশেষ কাজ
এত কাজের ভিড়ে কোন কাজটি আপনার কাছে বিশেষ বলে মনে হয়, এর উত্তরে শাহীন আহমেদ বলেন, প্রতিটি কাজই আমার কাছে বিশেষ। তবে এর মধ্যে কিছু কাজ আছে যার প্রতি এখনো আলাদা ভালোলাগা কাজ করে। ২০০৯ সালে জাতীয় জাদুঘরে ‘বয়ন সংগীত’ নামে প্রদর্শনীর আয়োজন করি। যেখানে নরসিংদীর তাঁতের কাপড় তৈরির পদ্ধতি ও ইতিতাস তুলে ধরি। ২০১১-২০১২ সালে জামদানি বিপণন প্রদর্শনী করি। যেখানে ডেমরা অঞ্চলের জামদানির আয়োজন করেছিলাম। এ ছাড়া ২০১৩ সালে হোম টেক্সটাইল এক্সেবিশন করি। বেডশিট, পর্দা, কুশনের প্রদর্শনী করা হয় সেখানে। ২০১২ সালের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের ওয়ারড্রব পার্টনার হিসেবে ছিলাম এবং ২০১৩ ও ২০১৪ সালে বাংলাদেশের জাতীয় হকি দলের ওয়ারড্রব পার্টনার হিসেবে কাজ করি।
কাজের স্বীকৃতি
এতদূরের পথচলায় স্বীকৃতি কতটুকু পেয়েছেন জানতে চাইলে শাহীন আহমেদ বলেন, আমরা যাঁরা ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে আছি তাঁরা শুরু থেকেই অনেক ফ্যাশন প্রতিযোগিতা করতাম। তাই অনেক ধরনের পুরস্কার স্বীকৃতি হিসেবে অঞ্জনস পেয়েছে। এ ছাড়া সাপ্তাহিক ২০০০ পত্রিকায় ২০০০ সালে ফ্যাশন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন অব দ্য ইয়ার হয়েছে অঞ্জনস। এবং বেক্সি ফেব্রিক্স ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতায় ২০০৩ সালে সেরা ফ্যাশন হাউস হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে অঞ্জনস।
অবসর এবং ভালোলাগা
অবসরে টিভি দেখতে পছন্দ করেন শাহীন আহমেদ। আর ঘুরতেও বেশ ভালো লাগে তাঁর। সময় পেলেই দেশে-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান তিনি। খেতে ভালোবাসেন ভাত, মাছ আর গরুর মাংস। সাবিনা ইয়াসমিন, আইয়ুব বাচ্চু, জেমস ও শ্রীকান্তের গান ভীষণ পছন্দ তাঁর। নিজে পরতে ভালোবাসেন সাদা রং আর পোশাক ডিজাইনের ক্ষেত্রে বেছে নেন লাল, মেরুন, ব্লু ও বেগুনি। পাহাড়, সমুদ্র ও জঙ্গল সবই ভালো লাগে শাহীন আহমেদের।
যাঁরা এই পেশায় আসতে চান
অনেকেই আছেন যাঁরা এই পেশায় আসতে চান তাঁদের উদ্দেশে শাহীন আহমেদ বলেন, আমি বলব এই পেশাটি খুবই সম্মানজনক একটি পেশা। আমরা পোশাক নিয়ে কাজ করি। সব সময় মনে রাখতে হবে আমার তৈরি পোশাকটি যে পরবে তাকে ভালো লাগতে হবে এবং তাকে যারা দেখবে তাদেরও ভালো লাগতে হবে। তাই এই কাজে দায়িত্বটা অনেক বেশি। যাঁরা এই পেশায় আসতে চান, তাঁদের অনেক ধৈর্য ধরতে হবে এবং দূরদর্শী হতে হবে। আর এখন তো অনেকেই ট্রেনিং দিচ্ছে ফ্যাশন বিষয়ে। সেখান থেকে একটি ডিপ্লোমা করে এলে শুরুর দিকে কষ্টটা কম হবে। অনেক কিছু সহজেই পেয়ে যাবে, যা আমরা পাইনি। তাই চেষ্টার সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিও খুবই প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। সূত্র : এনটিভি অনলাইন
(বিডি প্রেস রিলিস/২ মার্চ/এসএম)
Posted on নভেম্বর ১৭th, ২০২৪
Posted on নভেম্বর ১৭th, ২০২৪
Posted on নভেম্বর ১৭th, ২০২৪
Posted on নভেম্বর ৩rd, ২০২৪
Posted on নভেম্বর ৩rd, ২০২৪
Posted on নভেম্বর ৩rd, ২০২৪
Posted on অক্টোবর ৩০th, ২০২৪
Posted on অক্টোবর ৩০th, ২০২৪
Posted on অক্টোবর ৩০th, ২০২৪
Posted on অক্টোবর ৩০th, ২০২৪