রিপোর্ট ডেস্ক :: স্যান্ডি সাহাকে চেনেনে? আচমকা এই প্রশ্ন করলে আপনি একটু হলেও হকচকিয়ে যাবেন৷ অবধারিত ভাবে বলবেন, কে স্যান্ডি! যদি বলি আরে, ওই ফেসবুকের ‘কাদা-কাদা’ ছেলেটা৷ আপনি একবাক্যে বলবেন, হ্যাঁ এবার চিনতে পেরেছি স্যান্ডিকে৷
ফেসবুকে ভাইরাল স্যান্ডি সাহা ও তার কাদা-কাদা৷ নিউ ব্যারাকপুরের বছর একুশের যুবকই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডে৷ বলা ভালো দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন এই প্ল্যাটফর্মে৷ এই বঙ্গে যারা নিয়মিত ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তাদের কাছে স্যান্ডি এখন বেশ পরিচিত নাম৷
ফেসপ্যাক লাগিয়ে ফেসবুক লাইভ করেই রীতিমতো জনপ্রিয়৷ আড়াই থেকে তিন লাখের বেশি শেয়ার হচ্ছে তার এক একটা ভিডিও৷ হাজার-হাজার কমেন্টের ঝড় বুঝিয়ে দিচ্ছে তিনি ‘সেলিং লাইক হট কচুরিস’ ৷তাবড় সেলেবদেরও রীতিমতো ‘লজ্জায়’ ফেলে দিতে পারেন স্যান্ডি৷ হ্যাঁ, এমনই এখন তাঁর টিআরপি৷
ফেসবুকের দৌলতে নামটার সঙ্গেও স্যান্ডি বেশ ভালোভাবেই পরিচিত৷ হোয়টসঅ্যাপেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, রাত এগারোটার পর ফোন করলেই মন খুলে আড্ডা দেবে ‘রাত জাগা পাখি’ স্যান্ডি৷ ঠিক তেমনটাই হল৷ কথোপকথনটা নিছকই সাক্ষাৎকারের চৌহদ্দিতে আটকে ছিল না৷ স্যান্ডির সঙ্গে টেলিফোনে গল্পই হল৷ আর তাতেই ‘মানুষ স্যান্ডি’টা বেরিয়ে এসেছে৷ কথা বলতে বলতেই বুঝলাম স্যান্ডির পরিচয় কখনই কাদা-কাদা হতে পারে না৷এটা একটা শুধুই দিক৷ গোটা পৃথিবীটাই পরে আছে৷
এ কথা-সে কথার মাঝেই স্যান্ডিকে সরাসরি প্রশ্নটাই করে বসলাম, আচ্ছা আপনি হঠাৎ এরকম কাদা-কাদা করেই ফেসবুক এলেন কেন? এটা কী পূর্বপরিকল্পিত? নাকি জনপ্রিয় হওয়ার জন্য কোনও স্টান্ট? স্যান্ডি বললেন,‘‘ একেবারেই কিছু প্ল্যান করে করিনি, হঠাৎ একদিন এমনিই ইচ্ছা হল যে, ফেসপ্যাক লাগিয়েই লাইভ করি৷এর আগে গায়ে চাদর মুড়িয়েও লাইভ করেছিলাম৷ ফেসপ্যাক লাইভটার দশ-বারো দিন পর সেটা প্রচুর শেয়ার হয়৷আমার এক বন্ধুই সেই খবরটা দিল৷ সে এও বলল যে, লোকজন যাতা খিস্তি-খেউর করছে আমাকে৷ তুই আর লাইভ করিস না৷ রাস্তায় বেরোলে আরো গালাগালি খাবি৷তখনই জেদ চেপে গেল৷ ভেবেই নিলাম আরো লাইভ করব৷ আরে বাবা, আমার মুখ, আমার ফোন৷ আমি যা ইচ্ছা করতে পারি৷তাতে কার কী!’’ লাইভের প্রসঙ্গেই জানতে চাইলাম, স্যান্ডির বিচারে এখনও পর্যন্ত সেরা লাইভ কোনগুলো? শেয়ার আর লাইকের নিরীখে স্যান্ডি বেশ কিছুটা ভেবে বলছেন,‘‘ প্রথমেই থাকবে ঘরে বসে ফেসপ্যাকের লাইভ৷তারপর পাওডার৷পুরো রাস্তায় প্যাক লাগিয়ে ঘুরে বেরানোরটাও বেশ ভালো হয়েছে৷ হাফ-কাদা ও সিমপার্ক মল তো আছেই৷’’
স্যান্ডি মানে কিন্তু শুধুই ফেসবুক লাইভ নয়, যারা জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘রোডিজ’-এর বড় ভক্ত, তারা চেষ্টা করলে স্যান্ডির মুখটা হয়তো মনে করতে পারবেন৷ ধরিয়ে দিচ্ছি একটু৷ রোডিজ সিজন নাইন, সেবার বিচারকের আসনে করণ কুন্দ্রা, বিজেন্দর সিং, রণবিজয় ও এশা দেওল৷ মঞ্চে এলেন কলকাতার স্যান্ডি৷ প্রকাশ্যে সারাদেশের সামনে জানিয়ে দিলেন নিজের সেক্সুয়াল ওরিয়েনটেশন৷ ‘‘আই এম প্রাউড টু বি এ গে’’৷ ক’জনই বা এরকমটা বলতে পারেন সবার সামনে৷
রাতারাতি বিচারকরা একটু আলাদা চোখেই দেখেছিলেন স্যান্ডিকে৷ হাসি-ঠাট্টা আর বোল্ড স্টেটমেন্টে মাতিয়ে দিয়েছিলেন সেদিন৷ রোডিজের ইতিহাসে প্রথম গে প্রতিযোগী স্যান্ডির কাছে জানতে চাইলাম, রোডিজ না ফেসবুক লাইভ? কোনটা বেশি জনপ্রিয়তা দিয়েছে আপনাকে? স্যান্ডি হেসেই বললেন,‘‘ আসলে রোডিজ করার পর বেশ কিছু মানুষ আমাকে রাস্তাঘাটে চিনতে পারছিলেন৷ তবে এখন পরিচিতিটা অনেক বেড়েছে৷ সবাই বলে ওই যে, স্যান্ডি কাদাকাদা সাহা৷ আমার কলেজে ঢুকলেও রীতিমতো ভিড় জমে যাচ্ছে এখন৷ বন্ধু থেকে স্যারেরা অনেকই অন্য চোখে দেখছে আমাকে৷ সত্যি বলতে জনপ্রিয়তটা উপভোগ করছি আমি৷ বেশ ভালো লাগছে আমার৷’’ স্যান্ডি প্রকাশ্যে বলেছেন তিনি সমকামী৷ যদিও এই সম্প্রদায় কিন্তু স্যান্ডির এই লাইভে মিশ্র প্রতিক্রিয়াই দিয়েছে৷ স্যান্ডি বলছেন,‘‘ আমাকে এলজিবিটি কমিউনিটি থেকে বলেছে আমি নাকি তাদের মুখ ডোবাচ্ছি৷ আবার কেউ কেউ প্রশংসাও করেছেন৷ বলছে আমি সাহস দেখিয়েছি৷ এটাই বা কম কিসের! আমি যদিও এসব নিয়ে ভাবি না, করতে ভালো লাগছে তাই করছি৷’’
স্যান্ডি কিন্তু অবশ্যই স্পোর্টিং৷ তাঁকে নিয়ে করা ‘ট্রোল’ আর ‘মেমে’ শেয়ার করেন নিজের ওয়ালেই৷যদিও মজাদার বিষয়ের সঙ্গেই সেখানে থাকে অশ্রাব্য গালিগালাজও৷ যেটা লাইভের সময়েও স্যান্ডি পেয়ে থাকেন কমেন্টে৷ স্যান্ডির পরিবারের সদস্যদের নিয়েও অনেকে কুকথা বলতে দু’বার ভাবেন না৷ স্যান্ডি এই প্রসঙ্গে বলছেন,‘‘ আমরা কাছে ওপসন থাকে কমেন্টগুলো উড়িয়ে দেয়ার৷ কিন্তু আমি ওগুলো রেখে দিই৷ তারা বললেই তো আর আমি সেটা হয়ে যাচ্ছি না৷ জানেন, সবচেয়ে অবাক লাগে অনেকে বলে স্যান্ডি মা-বাবার কথা ভাবছে না! তাদের কাঁদাচ্ছে স্যান্ডি৷আচ্ছা আপনি বলুন তো, মুখে পাতা দিলে বা ফেসপ্যাক লাগালে কি বাবা-মা’র অসম্মান হয়! আমার মা আমার পাশে বসেই লাইভ দেখেছেন৷ কখনও হেসেছেন বা খুবজোর বলেছেন জোকার৷বাবা খুব একটা কথা বলেন না, একটু চাপা স্বভাবের৷তবে কিছু বলেনি এগুলো দেখে৷’’
স্যান্ডিকে নিজেই বলছেন, শহরটাকে কাদা-কাদা করে এবার বাংলাদেশেও আসে কাদা-কাদা করতে৷ ফেসবুকের দৌলতেই স্যান্ডির কাছে এসে গিয়েছে অনেক প্রস্তাবও৷ অর্থনৈতিক পরিবর্তনের দিকটাও স্যান্ডি তুলে ধরলেন৷ বলছেন,‘‘রেডিও-তে শো করার জন্য ডাক পেয়েছি৷ বেশ কয়েকটা ছবির প্রস্তাবও পেয়েছি৷ এখনও আমি এসব নিয়ে ভাবিনি কিছুু৷ থিম বেসড টি-শার্ট প্রমোশনের জন্য আমাকেই বেছে নিতে চেয়েছে একটা কোম্পানি৷ তারা বলছে ভালো টাকাই দেবে আমাকে৷ ভেঙ্কটেশের ব্যানারে কাজ করা বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রীর টেক্সটাও আমার কাছে কম প্রাপ্তি নয়৷ আমি তাঁর নাম বলছি না আপনাকে৷ তিনি বলছেন, শ্যুটিং ফ্লোরে আমাকে নিয়ে আলোচনা হয়৷ আমি নাকি এখন সেলিব্রিটি হয়ে গিয়েছি৷ এসব শুনতে কার না ভালো লাগে৷’’
ফেসবুক লাইভের বাইরেও রয়েছে একটা অন্য স্যান্ডি৷ সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ফিজিওলজির ছাত্র৷ ফাইনাল বর্ষেই রয়েছেন তিনি৷ জ্যোতিষ চর্চাও করেন শখে৷ ভালোলাগার তালিকায় রয়েছে ছবি বানানো৷ ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের আন্তর্জাতিক শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে পয়লা মার্চ দেখানো হয় স্যান্ডির ছবি ‘ব্যাডলাক’৷ এসব নিয়েই স্যান্ডি৷
স্যান্ডি মানে কিন্তু শুধুই কাদা-কাদা নয়৷ একজন ‘মাল্টিলেয়ারড’ মানুষও তিনি৷ শিক্ষিত ও সৃজনশীলও বটেই৷ ফেসবুক লাইভের জনপ্রিয়তায় আজও বদলালনি তিনি৷ বাগবাজারের মায়ের ঘাটে বসেই আড্ডা মারতে চান৷ ইন্ডাস্ট্রির নামি মডেলরাও আজকাল তাকে একটু বেশিই পাত্তা দিচ্ছেন৷ পাচ্ছেন প্রেমের প্রস্তাবও৷ আপাতত প্রেম করতে চান না তিনি, কাদা-কাদাতেই মজে আছেন যে মানুষটা৷
বিডি প্রেস রিলিস/২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮/এসএম)
Posted on ডিসেম্বর ৩rd, ২০২৪
Posted on ডিসেম্বর ৩rd, ২০২৪
Posted on নভেম্বর ২৬th, ২০২৪
Posted on নভেম্বর ২৬th, ২০২৪
Posted on নভেম্বর ১৭th, ২০২৪
Posted on নভেম্বর ১৭th, ২০২৪
Posted on নভেম্বর ১৭th, ২০২৪
Posted on নভেম্বর ৩rd, ২০২৪
Posted on নভেম্বর ৩rd, ২০২৪
Posted on নভেম্বর ৩rd, ২০২৪